স্টাফ রিপোর্টার: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের চান্দেরচর, খাসকান্দি ও মদিনাপাড়া এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে পুদিনা—একটি সুগন্ধি ও ওষুধিগুণে সমৃদ্ধ ভেষজ উদ্ভিদ। বছরের সব সময়েই বাজারে এই পাতা চাহিদাসম্পন্ন, বিশেষত রমজান মাসে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই এলাকার উৎপাদিত পুদিনা এখন পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশের বাজারেও।
চান্দেরচরের কৃষক মো. আমির হোসেন জানান, তারা প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে পুদিনা চাষ করে আসছেন। এবারে তিনি প্রায় ৯০ শতক জমিতে পুদিনা চাষ করেছেন এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ভালো ফল পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “রমজানেই সবচেয়ে ভালো দাম পাওয়া যায়, তবে বছরজুড়েই বিক্রি হয়।”
অন্য আরেক চাষি মো. সুন্দর আলী জানান, পুদিনার ফলন ভালো হলেও যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সময়মতো বাজারে পৌঁছানো কঠিন হয়। তিনি বলেন, “পাতা তোলার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে বাজারে পৌঁছাতে না পারলে তা নষ্ট হয়ে যায়, এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয়।”
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, “সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা চাষ একমাত্র বালুরচরের চান্দেরচর ও আশপাশের এলাকাতেই সীমিত। আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়ে থাকে। অন্যত্র পুদিনা চাষ মূলত ছাদবাগান কিংবা টবেই সীমাবদ্ধ।”
পুদিনার বহুমুখী উপকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুদিনা কেবল স্বাদ আর ঘ্রাণেই নয়, স্বাস্থ্য উপকারিতাতেও অতুলনীয়। হজম শক্তি বাড়ানো, শ্বাসকষ্ট উপশম, মাথাব্যথা কমানো, মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণ, ত্বকের সমস্যা নিরসন, রক্ত পরিশোধন এবং মানসিক প্রশান্তি—all in one—এই পাতায় রয়েছে।
রমজান মাসে শরবত বা সালাদে ব্যবহারের পাশাপাশি সারা বছরজুড়ে পুদিনা চা, পানীয় এবং ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
প্রয়োজন সরকারি সহায়তা
স্থানীয় কৃষকেরা মনে করেন, সরকারি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ এবং রাস্তা উন্নয়ন করা হলে এই চাষ আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। তখন পুদিনা হতে পারে এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য।
প্রাকৃতিক পরিবেশ, উর্বর মাটি ও পরিশ্রমী কৃষকদের হাত ধরে চান্দেরচরের পুদিনা হয়ে উঠতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার নাম। প্রয়োজন শুধু যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।
Be the first to comment on "মুন্সীগঞ্জের চান্দেরচরে পুদিনা চাষে সুবাস ছড়াচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত"