শিরোনাম

লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ অনুমোদনে বিশিষ্টজনদের প্রতিবা

 

লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। একই সঙ্গে এ প্রকল্প থেকে সরে আসতে সরকারকে আহ্বান জানান ১৮ জন অধিকারকর্মী ও পরিবেশ সংগঠক।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তারা। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) একনেকে ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়)’ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, জনসংখ্যা আধিক্যের কারণে দেশে ভূমি সংকটের ফলে চাহিদার তুলনায় বনভূমির পরিমাণ যথেষ্ট কম। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক বনকে সুরক্ষা দেওয়া ও দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার যেখানে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, সেখানে লাঠিটিলায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রাকৃতিক বনরক্ষায় সরকারের চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

তারা বলেন, ইতোপূর্বে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-১ এবং গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-২ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই দুটি সাফারি পার্ক পরিচালনা নিয়ে বন বিভাগের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব অবহেলা ও চরম স্বেচ্ছাচারিতায় একের পর এক বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। দুটি সাফারি পার্ক পরিচালনায় ব্যর্থতা ও পরিবেশের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও লাঠিটিলায় আরেকটি সাফারি পার্ক নির্মাণের চেষ্টা অনভিপ্রেত।

 

যৌথ এই বিবৃতিতে তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত কিছু লোকের আর্থিক লাভ ছাড়া তা দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই দেশের অন্যান্য নাগরিকদের উদ্বেগের সঙ্গে আমরাও লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করছি।

তারা আরও বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও লাঠিটিলা এতদিন বিভিন্নভাবে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে যা বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। এমতাবস্থায় বনবিভাগ থেকে এসব মানববসতি উচ্ছেদ করে বনের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার কথা থাকলেও তা না করে গ্রাম বহাল রেখেই সাফারি পার্ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

 

প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ২৪৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে বনটিকে একেবারে আমূলে বদলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা আছে। পুরো পরিকল্পনা এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা চিন্তা করে স্বাভাবিকভাবেই শুধু সিলেট অঞ্চলে নয় সারা বাংলাদেশে পরিবেশ সচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুলতানা কামাল, গণসাক্ষরতা অভিযান প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ওয়াটার কিপার্সের সমন্বয়ক শরিফ জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের ফাদার সমন্বয়ক জোসেফ গোমেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মাদ আলী, তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম।

জানা যায়, সরকার এ বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকাকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। লাঠিটিলা বনে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো শুকর, ক্ষুদ্র লেজযুক্ত উদবিড়াল, উল্টোলেজি বানরসহ বিপন্নপ্রায় ও বিরল ২০৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। লাঠিটিলা বন দেশের ছয়টি আন্তঃসীমান্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।

 

Be the first to comment on "লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ অনুমোদনে বিশিষ্টজনদের প্রতিবা"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*