সিরাজদিখান প্রতিনিধি: ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহতদের সকলের বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখন শোকের মাতম। গত রাতেই এক এক করে নিয়ে আসা হয় মরদেহ। আর শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। অর্ধশত যাত্রী নিয়ে পিকনিক শেষে ট্রলারডুবিতে এ পর্যন্ত ৪৩ জনকে জীবিত ও মৃত উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার ও রোববার ডহুরী, রসকাঠি, তালতলা, শুলিমপুরসহ এর আশপাশের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এসব যাত্রীদেরকে উদ্ধার করে টংগীবাড়ি-লৌহজংফায়ার সার্ভিস ও এলাকার লোকজন। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাহি শেখ, নাভা ও তুরান নামে ৩ শিশু এখনও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
নিখোঁজের স্বজন পিকনিকের ডুবে যাওয়া ট্রলারে থাকা আলো আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিখোঁজ এসব পরিবারের স্বজনদের মধ্যে এখন আহাজারি চলছে। রোববার (৬ আগস্ট) সকাল ৯টায় খিদিরপুর গ্রামে জানাজা শেষে দাফন করা হয় মরদেহ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সিরাজদিখান উপজেলা থেকে ট্রলারে করে লোকজন পদ্মা সেতু ও এর আশপাশের এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। ট্রলারটিতে ৪৬ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। সারাদিন বেড়িয়ে ফেরার পথে বালুবাহী একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়। দুপুরে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফিরতে গিয়ে রাত হয়ে যায়। বান্ধহেটিতে বাতি না থাকায় দেখা যাচ্ছিল না। যখন বাতি জ্বলে ওঠে তখন ট্রলার আর দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি। অধিকাংশরা সাঁতরে উঠলেও পানিতে ডুবে মারা যায় ৮ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন।
এদিকে, ট্রলার ডুবির পরপরই নদীপাড়ে ভিড় করেন স্বজনরা। নিখোঁজদের উদ্ধারে নদীতে নামেন স্থানীয়রা। এদিকে, দুর্ঘটনার সাড়া ৫ ঘণ্টা পর বিআইডব্লিউটিএ এর লিফটিং ব্যাগ ব্যবহার করে ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধারে রাত দেড়টা পর্যন্ত অভিযান করেছে। এখনো অভিযান চলছে।
নিহতরা হলেন—সিরাজদিখানের হ্যাপি আক্তার ও তার দুই ছেলে সাকিব ও রাকিব, বোন পপি আক্তার, সাজিবুল, ফারিহান, মোকসেদা, মাহির।
পুলিশ সুপার আসলাম খান জানান, স্থানীয়দের সহায়তায় মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। অধিকাংশই সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। ৩৪ জন জীবিত উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান ও লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আউয়ালসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা উদ্ধার কাজ তদারকি করছেন।
স্থানীয়রা জানান, যে জায়গায় ট্রলারটি ডুবেছে তার এক পাশে লৌহজংয়ের রসকাঠি গ্রাম আর অপরপ্রান্তে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সিলিমপুর গ্রাম। দুর্ঘটনার পর দুই পাড়ের মানুষ ছুটে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে ফয়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন আসেন। কিন্তু রাতের অন্ধকার আর নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের উদ্ধার কাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বালুবাহী বাল্কহেড রেখে চালক পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারটির ছাদে বাঁশ ও কাপড়া দিয়ে শামিয়ানা টানানো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। দুর্ঘটনার পর পরই ট্রলারের যাত্রীদের স্বজনরা নদী পাড়ে চলে আসেন। সেখানে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা আহাজারি করছেন। মরদেহ উদ্ধারের পর পরই প্রিয়জনের খোঁজে তারা সেখানে ছুটে যাচ্ছে।
Be the first to comment on "মুন্সীগঞ্জে পিকনিকের ট্রলারডুবি, নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম"