কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ।। মিরকাদিম পৌরসভার কমলাঘাট বন্দর দেশের একটি ঐতিয্যবাহী ব্যবসায়ী কেন্দ্র, একসময় এই বন্দরে জমজমাট তেল, ডাল,ময়দা,গুড়,খৈল, ভুষামালের ব্যবসা ছিল, মাওড়া কুলিদের হাঁকডাক আর, মাল উঠানামায় ছিল প্রাণচাঞ্চল্য, ছিল অসংখ্য ভোজ্য তৈল মিল, ডাল মিল, ময়দার মিল, চাউলের মিল, অসংখ্য আড়তদার, পাইকার ও ফৈড়ারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল খরিদ করে এনে আড়তদারের মাধ্যমে মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করত, ব্রিটিশ আমলে এই কমলাঘাট বন্দর থেকে ষ্টীমার যোগে কলিকাতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল আমদানি রফতানি করা হত। কালের আবর্তে এখন আর জমজমাট ব্যবসা নেই হাতেগোণা কিছু আড়তদার আর ভোজ্যতেল আর ডালের মিল শুধুমাত্র ইতিহাসের জানান দেয়। ভোজ্য তেল মিলের জন্য মিরকাদিম ছিল বিখ্যাত, বিশেষ করে এই সব মিলে
সরিষা,তিল,তিসি,বাদাম,ভেরেণ্ডা,গুজি প্রচুর পরিমানে ভেঙ্গে তৈল করা হতো আর এই তৈল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে খরিদ করে নিয়ে যেত। সয়াবিন-পাম তৈল আমদানির ফলে দেশি উৎপাদিত ভোজ্য তেলের চাহিদা করে যায়, এতে করে তৈল বীজের চাহিদা কম হওয়ায় কৃষক ভোজ্য তৈল বীজের চাষ না করে অন্যান্য লাভজনক ফসল আবাদ করে, তৈলকল মালিকরা প্রয়োজনীয় তৈল বীজের অভাব এবং দেশি উৎপাদিত তেলের দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসান দিতে দিতে ফতুর হয়ে মিল বন্ধ করতে বাধ্য হয় এবং মিলের যন্ত্রাংশ পানির দরে বিক্রি করে দেয়। একসময় কমলাঘাট আর রিকাবি বাজার মিলিয়ে মিরকাদিম পৌরসভায় প্রায় দুই শতাধিক ভোজ্য তেলের মিল ছিল, এখন ১০/১২টির বেশী হবে না।
একসময় দেশ-এ তৈল মিল ছিল না, গৃহহস্তরা বাড়িতে দেশী পদ্ধতিতে গানি বসিয়ে নিজেরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সরিসা-তিল পিষে তেল তৈরি করত, নিজেদের প্রয়োজনীয় তেল রাখিয়া বাড়তি তেল বিক্রি করে দিত, পরে মানুষের পরিবর্তে বলদ গরু ব্যবহার করা হতো, বলদের চোখ পট্টি দিয়ে ডেকে দেওয়া হত। অনেকে তখন এই কাজকে পেশা হিসাবে বেঁছে নেয়, তারপর ডিজেল ইঞ্জিন বসিয়ে গানি ঘুরানো হত, গানি ঘুরে ঘুরে তৈল বীজ পিষে তৈল বাহির করতো, এতে উৎপাদন বেশী হতো, এই উৎপাদিত তেল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হতো, পরবর্তীতে বিদ্যুৎ আসলে তখন বিদ্যুৎচালিত মটর দ্বারা গানি চালানো হলে খরচ যেমন কমে যায় তেমন উৎপাদনও বেড়ে যায় এবং ব্যবসার প্রসার ঘটে, পরবর্তীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়লে, বিভিন্ন জেলায় তৈল কর গড়ে উঠে, বিপরীতে মিরকাদিমের তৈলের চাহিদা কমে যায়, খরিদ্দার আসাও লোপ পায়, এই সমস্ত বিভিন্ন কারনে মিরকাদিমের তৈলের ব্যবসায় ধ্বস নামে। এখন আর তেমন গানি দ্বারা তৈল তৈরি করা হয় না, শুধুমাত্র স্পেলার দিয়ে তৈল বীজ পিষে তৈল করা হয়, এতে তৈলের মান কিছুটা নষ্ট হলেও লোকবল কম লাগে এবং খরচ কম হয়, এইভাবেই কিছু ব্যবসায়ী তৈল মিলের ব্যবসা করার মাধ্যমে মিরকাদিমের ঐতিয্য ধরে রেখেছে।
Be the first to comment on "মিরকাদিমের ভোজ্য তৈল মিল হারিয়ে যাচ্ছে!"