বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়ের নাম জসিম। খলনায়ক হিসেবে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রথম সিনেমাতেই তিনি ভিলেন হিসাবে বাজিমাৎ করেন। এরপর নায়ক হিসেবেও একের পর এক সফল ছবি উপহার দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পরপারে পাড়ি জমান কিংবদন্তী এই অভিনেতা।
পুরো নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। বাংলা সিনেমার দর্শকরা তাকে জসিম নামেই চিনেন। তিনি ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৩ সালে প্রয়াত জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন জসিম। একই পরিচালকের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই থেকে শুরু হয় নায়ক হিসেবে তার যাত্রা। জসিম ছিলেন একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ফাইট পরিচালক।
তিন প্রথম বাংলা সিনেমাতে অ্যাকশন সিনের প্রর্তাবর্তন করেন। জসিম আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। জসিম চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন দেবর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে। এই ছবিতে জসিম চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হলেও মূল পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত দোস্ত দুশমন চলচ্চিত্রে খলনায়কের অভিনয় করে।
খলনায়ক চরিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলেও পরবর্তীকালে নায়ক হিসেবেও তিনি সফলতা পেয়েছিলেন। দোস্ত দুশমন ছবিটি সাড়াজাগানো হিন্দি চলচ্চিত্র শোলের পুনর্নিমাণ। ছবিটিতে তিনি গাফফার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। খোদ শোলে ছবির নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের। তার খলনায়ক অভিনয়ের সমাপ্তি ঘটে ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সবুজ সাথী চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নায়ক হিসেবেই অভিনয় চালিয়ে যান।
আশির দর্শকের সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা ও রোজিনার সাথে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষণ-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যায়
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের জনপ্রিয় চার নায়ক মারা গেছেন খুবই অল্প বয়সে। জাফর ইকবাল, সালমান শাহ ও মান্নার সাথে তৃতীয় জন হলেন নায়ক জসিম। ১৯৯৮ সালের আট অক্টোবর পরলোকগমন করেন তিনি।
নায়ক বাংলা ছবিতে এসেছিলেন ভিলেন হয়ে। তবে, পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়েছিলেন অ্যাকশন নায়ক হিসেবে। সাধারণ মানুষের কাছে নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন অন্যরকম এক ব্যাপার।
যদিও, বাস্তব জীবনে তিনি আগে থেকেই তিনি ছিলেন সুপার হিরো। দেশের স্বাধীননার জন্য যুদ্ধ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
ক্যারিয়ারে তার প্রথম আলোচিত ছবি দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত-দুশমন’। এটা মূলত সারা জাগানো হিন্দি সিনেমা অমিতাব বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রর ‘শোলে’র রিমেক। সেই সিনেমাতে তিনি ‘গাব্বার সিং’য়ের চরিত্রে কাজ করেন। সেই অভিনয় মুগ্ধ করেছিল খোদ বলিউডের আমজাদ খানকেও।
জসিমের মৃত্যুর পর সেই শোক কাটিয়ে ওঠাটা সহজ ছিল না ঢালিউডের। এফডিসিতে একটা ফ্লোরের নামকরণ হয়েছিল তার নামে। সিনেমা জীবনে নানারকম চরিত্রে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন জসিম।
জমিসই একমাত্র নায়ক যিনি একই সাথে নায়িকা শাবানার ভাই ও প্রেমিকের ভূমিকায় কাজ করেছেন। শাবানা ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসিমের বিপরীতে কাজ করেন। আবার ‘অবদান’, ‘মাস্তান রাজার’ মতো ছবিতে জসিমের বড় বোন হয়েছিলেন।
বলা হয়, নায়ক রিয়াজের আবিস্কারক এই জসিম। ১৯৯৪ সালে রিয়াজ চাচাতো বোন ববিতার সাথে বিএফডিসিতে ঘুরতে এসেছিলেন। তখনই রিয়াজকে পছন্দ হয় জসিমের। জসিম তাকে ইন্ড্রাস্টিতে আসার প্রস্তাব দেন। ১৯৯৫ সালে জসিমের সাথে ‘বাংলার নায়ক’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ।
জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেছিলেন। জসিমের তিন ছেলে – রাতুল, রাহুল ও সামি। তিনজনই গানবাজনার সাথে জড়িত। তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডে কাজ করেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে, দোস্ত দুশমন, হিরো, টাইগার প্রভূতি।
Be the first to comment on "আজ নায়ক জসিমের জন্মদিন"