শিরোনাম

মিরকাদিমের সাদা গরুর চাহিদা বেশি, দামও

 

তানজিল হাসান।। কোরবানির জন্য পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সম্পূর্ণ সাদা বা ধবল রঙের গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তবে সে গরু অন্য কোনও জায়গার নয়, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের হতে হবে। ঈদ উপলক্ষ্যে পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের গনি মিয়ার হাটে এসব গরু পাওয়া যায়।

খামারিরা জানালেন, এই গরুর নিবাস ছিল ভারতে। তাই এদের পশ্চিমা গরুও বলা হয়। তবে ১০-১২ বছর ধরে ভারত থেকে এসব গরু আসা বন্ধ। এ কারণে দাম বেড়েছে ধবল গরুর। এই গরুর বিশেষ যত্ন নিতে খামারিদের অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের লাভ কম। তাই কমে গেছে খামারির সংখ্যাও।

 

মীরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গোর এলাকার হৃদয় বলেন, ‘আমি আর বাবা শুধু গরুর দেখাশোনা করি, অন্য কোনও কাজ করি না। গরু পালনের পাশাপাশি আমাদের একটি রিকশার গ্যারেজ আছে। আমরা রিকশাচালকদের কাছে রিকশা ভাড়া দেই। গরু পালন করা যতোটা না লাভজনক, তার চেয়ে বেশি নেশা। অন্য কোনও গরু নয়, আমরা শুধু ধবল গরু পালন করি। প্রতি গরুতে ২০-৩০ হাজার টাকা লাভ হলেই বিক্রি করে দেই।’

 

খরচের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে তিনটি গরু পালন করেছি। বড় গরুটি বাছুর হিসেবে কিনেছিলাম ফরিদপুরের ট্যাঁপাপাড়া থেকে। দাম পড়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ছোট দুটি কিনেছিলাম দুই লাখ টাকায়। এরপর প্রতিদিন খাবার বাবদ খরচ করেছি গরু প্রতি পাঁচশত টাকা। আমাদের শ্রমের বাইরেই প্রতি গরুতে অনেক টাকা খরচ হয়ে থাকে। সে তুলনায় লাভ তেমন হয় না।’

 

ধবল গরুর বাজারের প্রসঙ্গে তিনি জানান, মাত্র দেড়-শতাধিক ধবল গরু রহমতগঞ্জ হাটে ওঠে। মুন্সীগঞ্জ থেকে ট্রলারে করে আমরা হাটে নিয়ে যাই। অনেক সময় ক্রেতারা বাড়ি থেকে গরু কিনে নিয়ে যান।

 

নগর কসবার জাকির ও আক্তার জানান, এই গরু পালতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমরা কখনোই এই গরুকে ঘাস খাওয়াই না। মূলত গমের ভূষি ও খুদ খেয়েই এই গরু বড় হয়। রাতে যেন মশা কামড়াতে না পারে সেজন্য সব গরুর ঘরে মশার কয়েল বা মশারি টানানো হয়। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়ম করে গোসল করাতে হয়।’

 

ধবল গরুর পরিচর্যার বিষয়ে মঞ্জুর বলেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে বড় করতে আমরা গরুকে কোনও ইঞ্জেকশন দেই না বা ট্যাবলেট খাওয়াই না। ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট খাওয়া গরুর গায়ে হাত দিয়ে টিপে দেখবেন। গরুর গা নরম হবে, ডেবে যাবে। কিন্তু ধবল গরুর গায়ে হাত দিয়ে দেখুন, গরুর গা শক্ত। ধবল গরুর মাংস খেতেও সুস্বাদু।’

 

খামারি কামাল জানান, বছর দশ আগেও মীরকাদিমের বিভিন্ন পরিবারে প্রায় আট শতাধিক গরু লালন পালন করা হতো কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে। এখন তা কমে একশ’ থেকে দেড়শ’তে দাঁড়িয়েছে। নানা কারণে মানুষ গরু পালন করা বাদ দিয়েছে। তবে আমাদের গরুর চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও হাটে তোলার একদিনের মধ্যে বিক্রি হয়। আর এই গরুর দামও অন্য জাতের গরুর তুলনায় বেশি।

— সভ্যতার আলো

Be the first to comment on "মিরকাদিমের সাদা গরুর চাহিদা বেশি, দামও"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*