সিরাজদিখান প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কৃষি জমির পরিমাণ আশংকাজনক হারে কমছে। তার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, বাড়িঘর নির্মাণ,ইটভাটায় মাটি বিক্রি এবং জলাভূমি ভরাট ধ্বংস করার আত্মবিনাশী প্রক্রিয়া। এভাবে চলতে থাকলে বসবাস উপযোগী পরিবেশই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, নিকট ভবিষ্যতে সমগ্র জনগোষ্ঠীই এক বিপর্যয়কর অবস্থায় গিয়ে পড়বে। যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দেওয়া এক সময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বালুচর,লতব্দী,বাসাইল,কেয়াইন,চিত্রকোটসহ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দু’পাশে নামে-বেনামে গড়ে উঠছে শতাধিক হাউজিং কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফার লোভ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বাড়িঘর নির্মাণ, জলাভূমি ভরাট ও ইটভাটা নির্মাণের ফলে কমছে কৃষিজমি। এতে খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তা আপাতদৃষ্টিতে কারো চোখে ধরা পড়ছে না। হাউজিং কোম্পানিগুলো যেভাবে কৃষিজমি ও জলাশয় দখল করে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে, এতে ভবিষ্যতে খাদ্য সঙ্কটের সৃষ্টি হবে।জানা যায়, হাউজিং কোম্পানিগুলো এতটাই শক্তিশালী, কোনো ধরনের সরকারি অনুমতি ছাড়াই অবৈধ দখল ও মাটি ভরাট কার্যক্রম শুরু করে। নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে কৃষিজমিতে বালু ভরাট করে। সরকারের কোনো নির্দেশনাও তোয়াক্কা করে না। অথচ এসব কৃষি জমিতে লুকিয়ে আছে বহু কৃষকের সর্বস্ব হারানোর কষ্ট, বোবাকান্না।
কৃষি জমি অনুৎপাদনশীল কর্মকান্ডেও ব্যবহার চলছে । উপজেলায় প্রায় ৭০টি ইটভাটা। ইট প্রস্তুত করতে ভাটাগুলো ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করছে। এতে জমির উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে।। এ ধরনের অবস্থা ক্রমাগতভাবে চলতে থাকলে জমির ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবে- তা সহজেই ধারণা করা যায় । উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত কৃষি জমি না থাকলে স্বাভাবিকভাবে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে । ফলশ্রুতিতে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে।
সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত এক দশকে আগের তুলনায় দ্রুত হারে কমেছে ফসলি জমির পরিমাণ, এটাকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় একটি হুমকি বলে আমি মনে করি । সিরাজদিখানে যে সব জমিতে কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন এবং আমাদের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়। সে সব ফসলি জমি বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়নের ফলে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমগত কমছে।’
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশফিকুন নাহার দৈনিক সমকালকে জানান,‘মাননী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কৃষি জমির উপড় নজরদারি বাড়িয়েছি । ফসলি জমি যাতে আর নষ্ট না হয় সে বিষয় প্রশাসন তৎপর আছে।’
সিরাজদিখান কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন,‘সিরাজদিখানে আশংকাজনক হারে কুষি জমি কমে যাচ্ছে । ৫ বছর আগের হিসাব অনুযায়ী সিরাজদিখানে মোট কৃষিজমির পরিমান ১৪ হাজার হেক্টর । কি পরিমান ফসলি জমি ভরাট হয়েছে সেই সঠিক তথ্য জানতে আমাদের একটু সময় লাগবে তবে বিষয়টি আমি আমাদের উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবং মাসিক সমন্বয় মিটিংও আমি বিষয়টি তুলে ধরেছি ।’
Be the first to comment on "সিরাজদিখানে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি"