রাত দশটা। অপেক্ষায় কেউ নেই। খাবার টেবিলে সুপ পরিবেশন করা আছে। টেবিলে একাকীত্বের সঙ্গী হলো সুপের বাটি। মিরাজ সাহেবের সাথে চলছে সুপের বাটির কথোপকথন…
- মিরাজ সাহেব এটা কী খাচ্ছেন?
- সুপ খাচ্ছি। আপনার বাটিতে অন্য কিছু খাওয়া যায় কি? (ব্যঙ্গ করে)। খুব সুস্বাদু। মানুষের হৃদয়ের সুপ বলে কথা!
- পৃথিবীর সকল খাবার কী খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে? নাকি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য সংকট হয়েছে?
- তা হবে কেনো? তবে সে সব খাবার পুরোনো হয়ে গেছে। চাই নতুন স্বাদ। বুঝলে সুপের বাটি, মানুষ হয়ে মানুষকে খেতে খুবই দারুণ। খাওয়ার সময় নিজেকে রাজা মনে হয়।
- কতো দামে কিনলেন মানুষের হৃদয়? খুব কী দামী না সস্তা?
- হা হা হা…এই যে এখন, যার হৃদয়ের সুপ খাচ্ছি তার হৃদয়টা খুব ভারাক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত ছিলো। পাঁচলাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। একবছর পর সুদসমেত আমাকে মোট সাত লাখ টাকা পরিশোধ করবে। কোনো কারনে না দিতে পারলে তার সম্পূর্ণ শরীরই আমার হবে। এতে আমার কখনোই লস নেই।
- বাহ! দারুণ লাভজনক ব্যবসায়। আপনি তো পাকা ব্যবসায়ী। আচ্ছা মিরাজ সাহেব, একটু মনে করার চেষ্টা করুন, দশ বছর পূর্বে যে রাতে আপনার স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন তার পূর্ব মুহূর্তে আপনি কী এভাবেই অন্য কারো হৃদয়ের সুপ খেয়েছিলেন ?
- কি বিষয় সুপের বাটি? আজ হঠাৎ আমার বেডরুমের খবর জানতে চাইছো ? দশ বছর আগে কী করেছিলাম এটা সঠিক মনে নেই কখন কার হৃদয় খেয়েছিলাম। ওটা তো আমার ব্যবসায়। সব সময়েই এমনটা করতে হয়।
- ঠিক আছে মিরাজ সাহেব এবার দ্রুত খাওয়া শেষ করে আমাকে খালি করুন। পাশের রুমে আপনার নয় বছরের একমাত্র পুত্র সন্তান শুয়ে আছে। যার হার্টের একটা বাল্ব নষ্ট। প্রতিমাসে রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। ওর পক্ষে বেশিক্ষন জেগে থাকা সম্ভব নয়। আপনার খাওয়া শেষ হলেই এ বাটিতে ওকে ভেজিটেবল সুপের সাথে অনেকগুলো ঔষধ গুলিয়ে খাওয়াতে হবে…
Be the first to comment on "অনুগল্প || সুপ || সানজিদা সিদ্দিকা"