মাহবুব আলম জয়: ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে৷ পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকেই। এখানেই শেষ নয় দেশ হতে ঋন নিয়ে প্রবাসে ভাগ্য বদলে পাড়ি জমিয়ে প্রবাসে যেয়ে দালালদের পাঠার বলি হচ্ছে ভূক্তভোগীরা। এবং ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রবাসে অবৈধ হয়ে থাকছেন। আমাদের দেশে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে তাদেরকে প্রবাসে নিচ্ছেন। অার এই মাধ্যমের দালালদের নাম ছাড়া অনেকেই এজেন্সির নাম জানে না বিধায় প্রতারিত হয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন না। মানব পাচার আইন থাকলেও অনেকেই তা প্রয়োগ করতে পারছেন না।
নারী পুরুষ বিদেশে যেয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। বলছি প্রবাসী, নাম তার কাজু সিকদার এটা ছদ্মনাম। কৃষক এই কাজু সিকদার মধ্যপ্রাচ্যে ভাগ্য বদলে যাওয়ার জন্য এক দালালের মাধ্যম নেয়। সেই দালাল নেয় অন্য এক দালালের মাধ্যম। চার লক্ষ টাকা স্ট্যাম্প করে অগ্রিম দেন সেই দালালকে। কিন্তু দেড় বছরেও তাকে বিদেশ নিতে পারেনি। বাবার জমি বেঁচে এই টাকা দিয়েছিল কাজু। কিন্তু সেই টাকার ১ লক্ষ টাকা উঠাতে পারলেও বাকি টাকা তিনি উঠাতে পারেননি। বাবার জমি এবং টাকা দুটোই হারাতে হয়েছে তাকে। পরে পূণরায় অন্য মাধ্যমে সে সৌদিতে পাড়ি জমান।
কাজু স্ট্যাম্প থাকা সত্ত্বেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
এবার বলি মারুফের কথা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে গিয়েছিল। কিন্তু যে দালাল চক্র তাকে নিয়েছিল, সে প্রতি মাসে ওর মাইনে থেকে অনেক অর্থ কেটে রাখত। তার পাসপোর্ট ও আটকে রেখেছিল। বর্তমানে মালয়েশিয়াতে অবৈধভাবে আছেন। কিন্ত্র তিনি পারিবারিক অার্থিক ভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। দেশে এসে সে ইচ্ছে করলে ওই দালাল বা এজেন্সীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু দেশে এসেও কোন প্রদক্ষেপ নেন না মারুফরা। যে কারণে এই রকম ঘটনা ঘটেই চলছে। মুন্সীগঞ্জে প্রবাসীদের অর্থ থেকে অনেক রেমিটেন্স আসে। কিন্ত পদে পদে প্রতারিত হচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। নানান ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এডভোকেট মো: নাছিরউদ্দিন জানান, অভিবাসী কর্মী এবং অভিবাসনের নামে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের যুক্তিসংগত আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এছাড়াও কোন অভিবাসী কর্মি আইনের কোন বিধান বা কর্মসংস্থান চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিপূরণের জন্য দেওয়ানী মামলা করতে পারবেন।
এদিকে দেশে বিদেশে লোক নেওয়ার নামে দালালদের এতো প্রতারণার পরও অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। আইন অাছে কিন্ত ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসীরা ব্যবস্থা না নেওয়ার কারনে প্রতিনিয়ত এরকম ঘটনা ঘটছে। দেশে অভিবাসীদের আইনগত সহায়তা সহ নানান সমস্যা দিচ্ছেন ওকাপ সহ বিভিন্ন সংগঠন। মানবপাচার আইন বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা অনেকের।
Be the first to comment on "প্রবাসীদের জীবন : দালালদের রুখবে কে?"