শিরোনাম

নামীদামি বিদ্যালয়ঃ সেলিনা সিমি

 

অরিত্রি হত্যাকান্ড (আত্মহত্যা) পুরো জাতিকে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়ে গেল। এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নিয়ে কিছুদিন লেখালেখি,হট্টগোল, আলোচনা টেবিলে ঝড় -এপর্যন্তই। শিক্ষকেরা কোচিং এ বাধ্য করছে,বকা দিচ্ছে,শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করছে ব্লা ব্লা….

অনেকে তো রাতারাতি শিক্ষাব্যবস্থাই বদলে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

কিন্তু অভিভাবক হিসেবে নিজের কোন ভুল কি এখন পর্যন্ত আমরা খুঁজে পেয়েছি? মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে অভিভাবকদের উচ্চস্বরে প্রতিবাদ এটাও ইতিবাচক। কিন্তু আমার প্রশ্ন,আপনার সন্তানকে কেন ওইসব বিদ্যালয়েই পড়াতে হবে? আপনার সন্তান কি আলাদা কিছু শিখতে পেরেছে ওখানে গিয়ে?

আজ কেন এতো প্রতিবাদ, এতো হাহাকার?

আপনার সন্তানকে কেন মোবাইলে নকল করে মেধা তালিকায় উঠে মেধাবীর পরিচয় দিতে হবে? আপনার গল্পের,অহংকারের ঝুড়ি ভর্তি করার জন্যই কি?

আপনি কি আপনার সন্তানকে ঠিকমতো কাউন্সেলিং করেছিলেন?

ও কি বুঝতে পেরেছিল যে, পরীক্ষার মেধাতালিকায় না থাকলেও ওকে আপনি একইরকম ভালোবাসবেন? আপনার সন্তান আবেগপ্রবণ সেটা আপনার চেয়ে আর বেশি কে জানতো?যতটুকু জানি ওই স্কুলে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরাই পড়াশোনা করে।এটা একদিনে হয়নি। বরাবরই এমন হয়।আর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয়।আপনারা এসব অনিয়ম নিয়ে আগে কেন সোচ্চার হননি?

 

ওইসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ঔদ্ধত্য হয় কি করে? একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান, যিনি একজন নারী,হয়তোবা মাও তিনি এতোটা কঠোর কী করে হতে পারেন? এবশ্য এসব কড়াকড়ির জন্যই তো আপনার এতো লোভ।একটা নবম শ্রেণিতে পড়া বাচ্চাকে এতোটা মানসিক চাপে রাখার জন্যই তো এই বিদ্যালয়গুলোর এতো সুনাম।

 

সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কতটা যত্ন,ধৈর্য আর মহানুভবতা দিয়ে এই শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কোথাও কোন স্বীকৃতি পেতে দেখিনি সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের।কর্মক্ষেত্রে নানান অপ্রাপ্তিও এসব শিক্ষকদের দায়িত্বের পথে বাধা হয়নি কখনো।আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানগণও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে করণীয় আচরণ নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেন তাদের নানান পরামর্শ দেন।অথচ অভিভাবকের টান শুধু সেসব বিদ্যালয়কেন্দ্রিকই।

 

আমার পরিচিত এক ভদ্রমহিলা পরিবার নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুর থাকেন।তাঁর একছেলে পড়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে,এক মেয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে।

ছেলেটাকে নিয়ে সমাপনী পরীক্ষার স্কুল,কোচিং, বাসায় প্রাইভেট…. হায়রে ছুটাছুটাছুটি! নামকরা স্কুল বলেই শুধু তিনি তার বাচ্চাদের ঐসব স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন বলে জানালেন।বাচ্চাটার স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখে খুব মায়া হচ্ছিল।

আমি একদিন তাকে বলেছিলাম আপনার ছেলে ছাত্র ভালো।ওকে গভঃ ল্যাবরেটরি বা ধানমন্ডি বয়েজে এবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ান।ও ভালো ছাত্র,আসন কম হলেও ও চান্স পেয়ে যাবে।এতো জার্নি ছেলেটার সইবেনা।গভঃস্কুলে পড়ানোর কথা শুনে উনি আমার উপর কিছু না বেশ বিরক্তই হলেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো,এই ছোটাছুটিতে,সারাদিনের খাওয়া দাওয়ার অনিয়মে বাচ্চাটা পরীক্ষার ২০ দিন আগে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলো।পরীক্ষাও আশানুরূপ হয়নি।এই ঘটনাও আমাদের কোন শিক্ষা দেয়না,দেবেও না।

 

‘      আমি একজন শিক্ষক হিসেবে চাই, এই অসুস্থ                প্রতিযোগিতা থেকে বেড়িয়ে আসুক অভিভাবকেরা।              শুদ্ধিকরণ নিজের ঘর থেকে শুরু করুন।নিজের               মানসিকতা বদলে ফেলুন। তাহলে আর কোন                  অরিত্রিকে আমাদের হারাতে হবেনা।

 

 

Be the first to comment on "নামীদামি বিদ্যালয়ঃ সেলিনা সিমি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*