রাহমান মনি: ৩ বছর আগের ঘটনা, ২০১৫ সালের এই আগস্ট মাসেই ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা বনানী-গুলশানে বিদেশিদের রাস্তা পরিষ্কার করার বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা বিতর্ক হয়েছিল। অনেকেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। কেউবা আবার মেয়রের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ঢাকার রাস্তা পরিষ্কারে বিদেশিদের ঝাড়ু হাতে নামতে হচ্ছে, এর জন্য নগর কর্তৃপক্ষের জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত।
যদিও ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক (প্রয়াত) জানিয়েছিলেন যে, কিছু বিদেশি রাস্তায় যে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন সেটি নিয়ে তার মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি নেই। বিদেশিদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে এই উদ্যোগের ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য তিনি করতে চান না। যিনি বা যারা কাজটি করছেন, তিনি বা তারা ভালোর জন্যই কাজটি করছেন।
বিষয়টি বাংলাদেশ মিডিয়াতে ভালোই প্রচার পেয়েছিল সে সময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যায়। জাপান প্রবাসীরা তা লুফেও নেয়।
সাজানো গুছানো দেশ জাপানের মাটিতেও যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিচ্ছন্ন’র কাজ করতে পারে তা কি বিশ্বাসযোগ্য? হ্যাঁ, বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও জাপান প্রবাসীরা সেই কাজটি করে যাচ্ছে। তবে, পরিপ্রেক্ষিত এবং উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। জাপানিরা বাংলাদেশের রাস্তা পরিষ্কার করেছিল বাংলাদেশের অভিজাত এলাকার রাস্তার নোংরা পরিবেশ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য। আর, প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিচ্ছন্ন করছেন ‘টোকিও শহীদ মিনার’, প্রাণের তাগিদে, শ্রদ্ধা ভরে।
জাপানিরা বাংলাদেশে সড়ক পরিচ্ছন্ন করার পরের বছরই জাপানে টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্ট ক্লাব জাপান আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশ করেই টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্ট ক্লাব জাপান বেশকিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। তার মধ্যে টোকিও শহীদ মিনার পরিচ্ছন্ন রাখা অন্যতম।
মেধা পরিশ্রম সাফল্য (মেধার আলোকে বিকশিত হোক আমাদের ভুবন) মূল সেøাগানকে সামনে রেখে ‘টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্ট ক্লাব, জাপান’র যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু হলেও ১৯ মার্চ ২০১৭ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ উঁচু টাওয়ার টোকিও স্কাইট্রি থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
সেরা টাওয়ার থেকে যাত্রা শুরুর মূল উদ্দেশ্য হলো কাজের মাধ্যমে দেশ, মাটি আর মানুষকে সেরা সেবাটি দেয়ার জন্য। আর মূল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাংলার অহঙ্কার টোকিও শহীদ মিনার পরিচ্ছন্ন রাখা তার মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়াও সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদার অর্থায়নে জাপানে বিক্রমপুরের ছাত্রদের কল্যাণসহ বাংলাদেশের বিক্রমপুর এলাকার গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অগ্রযাত্রায় সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। বিক্রমপুর এলাকায় দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে।
টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্ট ক্লাব, জাপান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে টোকিও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দরবারে স্মারকলিপি প্রদান করে।
টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্টস ক্লাব জাপান প্রবাসী বিক্রমপুরের একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১০ জন সদস্য নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ এ। মেহেদি হাসান এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং সাখাওয়াত হোসেন সাধারণ সম্পাদক।
সাপ্তাহিক
Be the first to comment on "টোকিও বিক্রমপুর স্টুডেন্ট ক্লাব"