শিরোনাম

গাঁয়ের নাম গাওদিয়া

 

আলম শাইন :

বর্ষা মানেই সবুজ, সতেজ, নির্মল যৌবনের হাতছানি। বর্ষার কোমল পরশে প্রকৃতি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে নিমেষেই। জীবনকে করে তোলে আনন্দমুখর। বর্ষার নয়াজলের অদ্ভুত ঘ্রাণ নিতে আমরা জলেভাসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই। নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই। যেদিক যাবে ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি সেটিই হবে আমাদের গন্তব্য।

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকাল দশটা নাগাদ মিরকাদিম থেকে আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চেপে বসেছি। নাস্তাপর্ব সারতেই মাঝি নৌকা ছাড়লেন। নৌকা মন্থরগতিতে চলছে। চলতে চলতে বড়খাল অতিক্রম করে একসময় ইছামতি নদীতে পড়েছে। তার পর নৌকার গতি বাড়িয়ে দিলেন মাঝি। আমরা নদীর দুইপাড়ে তাকিয়ে রইলাম। অদ্ভুত লাগছে নদীর পাড়গুলো। দুই পাড় এবড়ো-থেবড়ো। কোথাও কোথাও খাড়াপাড় ভেঙে কাঁচা মাটির ঢেলা চিকচিক করছে। কোথাও ঢালু বালিয়াড়ি নদীতে নেমে গেছে। নদীর দুই পাড়ে নলখাগড়া ছড়াছড়ি। নদী সংলগ্ন ক্ষেতগুলোতে ধইঞ্চার ব্যাপক ফলন লক্ষ্য করলাম। ধইঞ্চা গাছে প্রচুর ফুলও লেগেছে। ক্ষুদ্র হলুদ রঙের ফুলে ধইঞ্চার চিকন শরীরটাকে সাজিয়ে দিয়েছে নববধূদের মতো। নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে বকের সারি। চলমান নৌকা বকের গা ঘেঁষে কেটে গেলেও পালিয়ে যাচ্ছে না ওরা।

 

নদীর জলে হেলেঞ্চা-কলমিলতা-চাঁদমালাসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদের বাহারি ফুল ফুটছে। জলজ উদ্ভিদের ফাঁকফুকুর গলে ছুটোছুটি করছে তিতপুঁটি, মলা-ঢেলাসহ নাম না জানা হরেক প্রজাতির মাছ। পোকামাকড়ও কিলবিল করছে। দেখতে বেশ লাগছে। সেসব দেখতে দেখতে প্রায় ঘণ্টা চারেক অতিক্রম করলাম। অমনি মাঝি জানালেন, নৌকা এখন পদ্মায় ভাসছে। নৌকা পদ্মায় পড়তেই জোরসে ঝাঁকুনি খেলাম। প্রচণ্ড সে াত, ঢেউ সব মিলিয়ে আমরা একটু ভড়কে গেলাম। সঙ্গীরা পদ্মার চরে নেমে কিছুক্ষণ ফুটবলও খেললেন। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে অমনি এলেন আরেকদল পর্যটক। প্রীতিম্যাচ খেলে আবার সবাই নৌকায় উঠলেন পরিশেষে।

 

ফেরার পথে আমরা লৌহজং থানার গাওদিয়া গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। জানতে পারলাম সেখানে বিশাল একটি বাড়ি এবং পার্ক পদ্মায় তলিয়ে যাচ্ছে; নিজ চোখে দেখার ইচ্ছে জাগল তাই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গাওদিয়া চলে এলাম আমরা। মনোরম একটি পার্ক। পদ্মা ঘেঁষে কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছে এখনো এবং ধীরে ধীরে শামুর বাড়ি নামক পার্কটি পদ্মায় তলিয়েও যাচ্ছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম সেখানকার সামনের অংশটুকু বিলীন প্রায়। বাদবাকি ওপরওয়ালার ইচ্ছা। বিষয়টা ভাবতে খুব কষ্ট লাগছে; এমনি একটি পর্যটনকেন্দ্র ক’দিন পর আসলে আর কেউ দেখবে না। কেউ জানতেও পারবে না এখানে একদিন ছিল পর্যটকদের মিলনমেলা।

লেখক: আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ। alamshine@gmail.com

 

— মানবকন্ঠ

Be the first to comment on "গাঁয়ের নাম গাওদিয়া"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*