আরিফ হোসেনঃ শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বার সুফিয়া বেগম (৫০)। স্থানীয় নারী অধিকার সহ স্থানীয়দের যে কোন সমস্যায় প্রথম ভরসার নাম ছিল সুফিয়া মেম্বার। ৪ সন্তানের জননী এই নারী একাধারে ৩ বার হাসাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের যে কোন কাজে থাকতেন সবার আগে, অসহায় দুস্থ্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন, কেউ অসুস্থ্য হয়ে সাহাজ্য চাইলে রাত-দিন নেই দে ছুট। সামাজিক-পারিবারিক সহ বিয়েসাদীর অনুষ্ঠানেও ছিল সরব উপস্থিতি। রবিবার সকালেও ছুটে ছিলেন পরোপকারের জন্যই। হাঁসাড়ার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বর্ণালংকার হারানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ মিটানোর জন্য স্থানীয় কয়েক জনের সাথে যাত্রা করেছিলেন ফরিদপুরের এক গনকরে বাড়ীতে। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ২৬ জন যাত্রী নিয়ে একটি সিবোট ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি ফেরির সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। কিছুক্ষন পর ফেরির যাত্রীরা সুফিয়া বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন সুফিয়া বেগমের শেষ যাত্রাও ছিল পরোপকারের জন্য। হাসাড়াঁর আনাচে কানাচে সবার মুখে মুখে তাই দিন ভর ঘুরে ফিরে উঠে আসছে এই নারী ইউপি সদস্যের নানা উপকারের চিত্র।
সিবোট ডুবির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন পার্শ্ববর্তী ষোলঘর ইউনিয়নের কেয়টখালী গ্রামের মোঃ জালাল সরদার (৬৫)। তিনি বিয়ে বাড়িতে এসে স্বর্ণালংকার খোয়ানো পপি আক্তারের পিতা। জালাল সরদার সহ হাসাড়াঁ এলাকার অন্তত ১০ জন মিলে ফরিদপুর গনকের বাড়িতে যাচ্ছিলেন পপি যাদের সন্দেহ করছে তারা স্বর্ণালংকার নিয়েছে কিনা তা জানার জন্য। বিরোধ মিটানোর অংশ হিসাবে সুফিয়া বেগমও তাদের সহযাত্রী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিবোটে মোট ২৬ জন যাত্রী ছিল। ফেরি বেলজিয়ামের সাথে ধাক্কা লেগে বোটটি ডুবে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে সুফিয়া বেগমকে মৃত উদ্ধার করা হয়। বাকিরা স্থানীয়দের সহযোগীতায় তীরে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
সিবোটের যাত্রী হাঁসাড়া গ্রামের আব্দুল হক (৪০) বলেন, আমরা হাঁসাড়া ও ষোলঘর এলাকার ১০ জন ওই সিবোটের যাত্রী ছিলাম। এলাকার একটি স্বর্ণলংকার চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুফিয়া বেগমকে সাথে নিয়ে আমরা সিবেটে পদ্মার ওপারে ফরিদপুরের এক গনকের বাড়ীতে যাওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেই। লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট থেকে সিবোটটি ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর একটি ফেরীর সাথে ধাক্কা লেগে বোটটি উলটে যায়।
হাঁসাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সোলায়মান খাঁন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, সুফিয়া বেগম একজন দক্ষ ইউপি সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
—-মুন্সীগঞ্জ ২৪
Be the first to comment on "শ্রীনগরে সুফিয়া মেম্বারের শেষ যাত্রাও ছিল পরোপকারের জন্য"