মামুনুর রশীদ খোকা ও সালাহউদ্দিন সালমান।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচরে টেঁটা, বল্লম, জুইত্যা, ছরকি আর রামদার মতো ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মল্লযুদ্ধের ইতিহাস দীর্ঘ ৪৭ বছরের। আদিমযুগের কায়দায় একদা সেখানে চর দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধারালো অস্ত্রসন্ত্র নিয়ে মল্লযুদ্ধ হতো। আর বর্তমান সময়ে এসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হয়ে আসছে আদিমযুগীয় এই মল্লযুদ্ধ। স্বাধীনতার পর ৪৭ বছরে বালুরচরে কতবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে-তা সঠিক করে কেউ বলতে পারবে না।
সরেজমিনে বালুরচর ইউনিয়নের খাসমহল বালুরচর ও মোল্লাকান্দি গ্রামে গড়ে উঠেছে বল্লম-টেঁটা বাহিনী। দীর্ঘ দিন ধরেই সেখানে বিরাজ করছে উত্তেজনা। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে। গ্রাম দু’টির সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্রস্তুতিতে কম নেই ঢাকার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ জাজিরা এলাকার কাশেম নেতা ও নারয়ানগঞ্জ জেলার ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের হাজী সামেদ আলী। মল্লযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি গ্রামের নুরু বাউল, নাছির মেম্বার, কামাল মেম্বার, আমজাদ সরকার, আমীর হোসেন ও আলেক চাঁন মুন্সী, খাসমহল বালুচর গ্রামের শুক্কুর আলী মাদবর, রাজনগর গ্রামের আফজাল মেম্বার, ফিরোজ মেম্বার, হাজী মমতাজ উদ্দিন গড়ে তোলেছেন টেঁটা ও বল্লম বাহিনী।
ওই সব গ্রামের সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই চর দখল নিয়ে শুরু হয়েছিল উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের খাসমহল বালুচর গ্রামের মো. সেরাজুল, জালাল মাস্টার, বনী আমি চেয়ারম্যান গং এবং মোল্লাকান্দি গ্রামের আলী হোসেন সরকার, গেদা মেম্বার, লেচু বকসা, গোলাম হোসেন চেয়ারম্যান পানিয়ারচর গ্রামের আয়ান প্রেসিডেন্ট গং এই টেটা-বল্লমের মল্লযুদ্ধের শুরু করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় অদ্যাবধি ক্রমশই চলছে এই টেটা-বল্লমের মল্লযুদ্ধ হয়ে আসছে।
এ সব বিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজন স্থানীয় ভাবে মিমাংসার জন্য বহুবার বৈঠক ও আলোচনায় বসেও এখন পর্যন্ত কেউ কোন সুরাহা দিতে পারেননি। এমনকি কয়েকদিন আগে বমল্লযুদ্ধের মূল হোতাদের সিরাজদিখান থানায় ডেকে এনে সুরাহা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও সেখানে চলছে মল্লযুদ্ধের ঢালডোল। যে কোন সেখানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আশংকা করছে স্থানীয়রা। বালুরচর বাজারের ব্যবসায়ীরা দিন কাটাচ্ছেন শংকার মধ্যে।
এ ব্যাপারে নুরু বাউল জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকেই চলে আসছে টেটা বল্লমের সংঘর্ষ। আমরাও নিজেদের সম্পদ এবং নিজের বংশের লোকদের রক্ষা করতে টেটা সংঘর্ষে জড়িত হতে হয়েছে। তবে আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি এই সংঘর্ষ যেন আর না হয়।
আলেক মুন্সী বলেন- টেটা বল্লম সংঘর্ষ করার আমাদের কোন ইচ্ছা নাই। তারপরও টেটা বল্লম সংঘর্ষে জড়িত হতে হয় নিজের বাপ দাদার সম্পদ রক্ষার্থে। আপনারা জানেন বিগত দিনে আমার ও আমার বংশের জমি এবং ইট ভাটা জোর করে দখল করে নিয়ে গেছে আমাদের প্রতিপক্ষ। আমার বংশের ২৮ টি বসত ঘর আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনুরোধ করবো এর ইতি টানার জন্য।
ঢাকার দক্ষিন কেরানীগঞ্জের কাশেম জানান, টেটা বল্লম যুদ্ধের কোন প্রয়োজন নেই। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন আকবরনগর গ্রামের সামেদ আলী বাহিনী কেরানীগঞ্জের জাজিরা ও সিরাজদিখানে জোর করে ঢুকে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। সেই সূত্র ধরে যুদ্ধে জড়াতে হয়।
এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার ওসি আবুল কালাম জানান, আমি সিরাজদিখান থানায় যোগদানের পর টেটা বল্লম সংঘর্ষ এবং টেটা বল্লম সংঘর্ষের প্রস্তুতি যা ঘটেছে-তার মিমাংসা করে দিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্বনয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের দ্বন্ধের সুরাহা করে দিয়েছি।#
# সভ্যতার আলো
Be the first to comment on "৪৭ বছরেও শেষ হয়নি বালুরচরের মল্লযুদ্ধ"