বীরমুক্তিযোদ্ধা কামালউদ্দিন আহাম্মেদ
কালের বির্তনের ধারাবাহিকতায় মাদকও বিভিন্ন পন্থায় বিস্তার লাখ করছে, মাদকসেবীদের সংখ্যা ও বিভিন্ন রুপে মাতলামী প্রসার লাভ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবার, সমাজ, দেশ, এই মাদকের ক্ষতি সারাতে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবাত্ত্বকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মাদব, নেশা, নেশাগ্রস্থ, মাতাল আর মাতালের মাতলামী এক অপরের পরিপূরক অর্থ্যাৎ যিনি মাদক গ্রহণ করবে, তার নেশা হবে, নেশার ঘোরে মাতলামী করবে।
এই যে নিজের দেহের স্বাভাবিক গতিকে মাদক খেয়ে উত্তোজিত করা হয়, এর একটা প্রতিক্রিয়া আছে, মাদক গ্রহনের ফলে মাদক গ্রহণকারীর দেহ ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় এর ফলাফল অসুস্থতা ও মৃত্যু। মাদকসেবন কারীর মৃত্যু হলেও তার পরিবারের বহন করে থাকে দূর্বিষহ জীবন।
আমার জানামতে দুই ধরণের মাদকসেবী আমাদের সমাজে বিচরণ করে, এক মাদকাসক্ত, দুই সৌখিনতা অর্থাৎ উৎসব আনন্দে সখের বশে মাদক সেবন করা।
তারপরও এক ধরণের মাদক সেবী আমাদের সমাজে আছে তারা হলো পেশাগত কারণে মাদক সেবক করে থাকে। তাদের মধ্যে চামার, মেথর অন্যতম।
তারা নেশা করার জন্য সরকারি ভাবে লাইসেন্স পেয়ে থাকে কারণ তারা সেই ধরণের কাজ করে, তারা মনে করে তাদের জন্যে মাদক গ্রহণ অপরিহার্য্য।
তিন ধরণের লোক মাদক সেবন করে থাকেন, এক উচু শ্রেণির অর্থশালী, তার মধ্যে অনেকে মাদক সেবনের মাধ্যমে তাদের কুলিন্য প্রকাশ করে থাকে। তাদের জন্যই ঢাকা শহর সহ বিভিন্ন শহরে অসংখ্য ক্লাব, বার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
আরেক ধরণের লোক বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে প্রথমত সখের সাথে মাদক সেবন করেন, পরবর্তীতে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে, এই শ্রেণির মধ্যে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও যুব শ্রেণির সংখ্যা বেশি থাকে। তারা ইয়াবা, হিরোইন, ফেনসিডিল সেবন করে থাকে।
তৃতীয় শ্রেণির হলো বেকার, অভাবগ্রস্থ পারিবারিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই শ্রেণির লোকজন পেথোডিন, চরস, স্প্রিট, বারা, ইয়ারা গ্রহণ করে থাকে, তবে এই শ্রেণির নেশাগ্রস্থ্য লোক নেশার অর্থের জন্য বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে, ছিনতাই, চুরি ইত্যাদি, তারা সচরাচর ইঞ্জেকশন পুষ করে, তবে হাতে টাকা আসলে বাবা, হিরুইনও সেবন করে।
আরেক শ্রেণির মাদক সেবী হলো ফকির, সাধু, ……. শিল্পি শ্রেণির তারা দেশী মদ ও গাঁজা সেবন করে থাকে। দেশে মাদক সেবীর সংখ্যা যত বাড়তে থাকে, মাদকের চাহিদা ও তত বাড়ে, এই চাহিদাপূরণে মাদক বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ে, বাড়ে মাদকের ব্যবসা। অর্থলোভী এই মাদকের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার প্রসারে সমাজের প্রতটি স্তরে মাদক এর বিস্তার ঘটায়, এতে মাদক সেবীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে, সাথে সাথে বাড়তে থাকে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, গুম এর মতো ভয়াবহ অপরাধ ও অপধারী।
অনেক ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসা অতি লাভজনক হলে রাতারাতি এই ব্যবসার মাধ্যমে কিছু লোক বিত্তশালী বনে যায়, তাদের উপর্জিত অর্থে মাদকের ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসৎ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী অর্থের বিনিময়ে হাত করে নেয়। তাই মাদক এর বিস্তার সহজে রোধ করতে প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্দ্যেগই ব্যর্থ হয়।
এাদকের বিস্তার রোধে মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রন করা সহ মাদক এর ব্যবসার সাথে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা গেলে দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব কারণে মাদকের সরবরাহ রোধ করা গেলে মাদক সামগ্রীর অতি মূল্য ও দুস্প্রাপ্যতার কারনে ধীরে ধীরে মাদক সেবীরা নেশা ছাড়তে বাধ্য হবে।
আসলে মাদক ও মাদক সেবী সবকালেই ছিল, আমাদের স্কুল জীবনে ৬০ দশকে আমরা দেখিছি, যারা মদ পান করতো, গাঁজা সেবন করতো তাদেরকে সমাজ কতোটা ঘৃনার চোখে দেখতো, বিয়ে সাদি বা অমান্য সামাজিক সম্পর্কের কথা উঠলেই বলা হতো, ওর বাপ মদারু, ওর বাপ গাজাখোর ওদের পরিবারের সঙ্গেঁ সম্পর্ক গড়া যাবে না।
মদারু কোন ছেলের সাথেতো মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই উঠতো না। তারপরও যারা মদ গাজা পান করতো, তারা সমাজের চোখকে আড়াল করে নিরবে-নিবৃতি নেশা করতো। আর বিত্তশালীরা কোন বার, হোটেলে গিয়ে মদ পান করতো, তাদের নিয়েও সমাজে কথা উঠতো ওর বাপ বারে যায়। বেশ্যালয়ে গিয়ে নাচ দেখে, মদ খায় ওই পরিবারের সাথে আত্মীয় করা যায় না।
তৎসময় মাদকসেবীদের প্রতি সমাজের এই যে প্রত্যাখ্যান, ঘৃণা তাহা দেখে সমাজের লোকজন মদ পান ও গাঁজায় দম দেওয়াকে ঘৃনার কাজ ও অপরাধ মনে করতো।
তাই মাদক বিস্তার রোধ ও মাদকসেবীদের নিয়ন্তন করার জন্য আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজে সচেতনা তৈরী করা অপরিহার্য। এমন যদি হয় যে পরিবারে কোন সদস্য নেশাগ্রস্থ্য থাকলে, সেই পরিবারকে সামাজিক ও প্রশাসনিক ভাবে সব বিষয় প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। সমাজ সেই পরিবারকে ঘৃণার চোখে দেখবে। এই ধরণের চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।
আসলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অবাদ বানিজ্যের বিকাশের ফলে ভাল বিষয়ের সাথে খারাপ বিষয়গুলোও চলে আসে, তা-দেশকে সামাল দিতে হয। মাদকের বিস্তার তারই একটা অংশ। তাই এই খারাপ বিষয়সমূহ বিস্তার রোধে সরকারের পাশাপাশি দেশের সকল স্তরের সৃজনশীল মানুষদের বিভিন্ন পন্থায় কাজ করতে হবে। আমার মনে হয় দেশে যে উন্নয়নের ধারা প্রবাহমান, মাদক এর বিস্তাররোধ করা গেলে দেশের উন্নয়নের ধারা আরো বেগবান হবে। দেশবাসী উপকৃত হবে। তাই মাদক দমনকে কোন রাজনৈতিক বিবেচনায় না নিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে দল, মত নির্বিশেষে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
Be the first to comment on "মাদকের বিবর্তন সমাজকে ক্ষত-বিক্ষত করছে"