মোঃ সেলিম মিয়া :
আমরা সবাই শ্রমিক, আমাদের এই সোনার বাংলাতে। নইলে মোরা শ্রমিকদের সঙ্গে, মিশবো কিভাবে। মালিক শ্রমিক ভাই ভাই, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উপহার চাই। সকল শ্রেণী ও পেশা মানুষদের অঙ্গীকার গর্জে উঠুক, এই শ্লোগান বার বার।
শ্রমিক দিবস ১লা মে ২০১৮ উপলক্ষ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত আমার প্রাণপ্রীয় শ্রমিক ভাইদের প্রতি সুনজরের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সকল বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ করিয়া আমাদের বাংলাদেশী তথা বহিঃর্বিশ্বের সকল শ্রমিক ভাইদের উদ্দেশ্যে সমাজের বাস্তব চলমান কিছু ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করিলাম।
উচুতলার বিলাশ বহুল জীবন-যাপনকারী বড়-বড় কর্তা বাবুদের প্রতিনিয়তই শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। অথচ শ্রমিকদের বহু পুরোনো দাবী ও আকাংখিত চাওয়া প্রতিদিনের ০৮(আট) ঘন্টা কর্ম পরিধি আজও পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়ায় পরিনত হয় নাই।
আমার এক বন্ধু আছেন, যিনি তার ২৫(পঁচিশ) বছরের ব্যবসায়ীক জীবনে লাখপতি থেকে প্রচলিত আইনের বিধি মেনে শতকোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন। যা সম্ভব হয়েছে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার সহিত ০৮(আট) ঘন্টার পরিবর্তে কদাপি-কদাপি ১৬(ষোল) ঘন্টা কর্মপরিধি বিস্তৃতি করার ফলে। হাজার হাজার টাকা বেতন পেয়ে কয়জন শ্রমিক ভাইয়েরা আছেন যে, এই ২৫(পঁচিশ) বছরে লাখপতি হয়েছেন। বরং খোঁজ নিয়ে দেখুন অধিকাংশ শ্রমিক ভাইয়েরা দুবেলা-দুমুঠো ভাতের জন্য মৃত্যু অবধী পর্যন্ত কর্মযুদ্ধ করে যাচ্ছেন।
শ্রমিক ভাইয়েরা অন্যায় করিলে মালিকগণ তাৎক্ষনিক শারীরিক নির্যাতন অথবা চাকুরীচ্যুত অথবা মামলা দিয়ে হয়রানী করে থাকেন। পক্ষান্তরে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য অভিযোগ দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাবুদের অনীহা, অনিচ্ছা, অবজ্ঞা ও পরিশেষে মিথ্যা মিমাংসার প্রতিশ্রুতির জালে বন্দী হয়ে থাকে তাহাদের সুবিচার। কদাপি-কদাপি আইনের অন্ধতার সুযোগে সাজানো মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে মালিক বাবুরা উল্টো শ্রমিকদের বন্দিত্ব জীবন উপহার দেন।
আমাদের বাঙ্গালী জাতির বর্তমানে যারা বড়-বড় মালিক, বড়-বড় কর্তা বনে গিয়ে বিশাল আধিক্য প্রতিষ্ঠিত সহ অধিক সম্মানের জায়গা দখল করে গর্ববোধ করিতেছেন, তাহারা নিজ নিজ পূর্ব পুরুষদের ৫০-১০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস ঘাটা-ঘাটি করে দেখবেন, আপনাদের বংশীয় শিকড় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় শ্রমিক নয় কৃষক ছিলেন।
আমাদের দেশের সাম্প্রতিক অনেক শ্রমিক ভাইদের সন্তানেরা খোদা প্রদত্ত মেধা শক্তির প্রভাবে উচু-উচু পদে মালিক বা বড় কর্তাবাবু হয়েছেন। কিন্তু ভুলে গিয়েছেন সমাজের সকলের সামনে আপনার পিতা-মাতার পরিচয় দিতে, ভুলে গিয়েছেন পির্তৃতুল্য, মাতৃতুল্য শ্রমিকদের সঙ্গে ভাল আচরন, ভাল ব্যবহার ও ভালবাসা উজাড় করে দিতে। কি আশ্চর্য্য আমাদের সমাজ,যেনো আলোর ভিতরে অন্ধকারের হাতছানি।
ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানী আমল বাঙ্গালী জাতির রক্তের বিনিময়ে রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ইং সালে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিলেন। শ্রমিক ভাইয়েরা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এই বুঝি আমাদের মুক্তি হল, এই বুঝি আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দিন আসিল। কিন্তু না, কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের কাধে ভর করে, কিছু অর্থলোভী লোক শ্রমিক নেতা সেজে অসাধু ব্যবসায়ীদের ও মালিক কর্তাবাবুদের সাথে যোগ-সাজস করে বিভিন্ন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান, মটরযান, নৌযান ইত্যাদি সংস্থা হতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দিয়া অবিরাম শ্রমিকদের ঠকানো শুরু করতে থাকেন। যা অদ্যবদি কোন-কোন ক্ষেত্রে চলমান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় শ্রমিক ভাইয়েরা কোন-কোন ক্ষেত্রে ন্যায্য পাওনাদি ও সুবিচার সঠিক ভাবে পেলেও কুট-কৌশলী ও সাদা বর্নের অপরাধীদের ক্ষমতার সিন্ডিকেটের দাপটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের সহজ সরল, অর্ধ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত নানা প্রকারের এই শ্রমিক সমাজ বঞ্চিত হচ্ছেন।
যেই শ্রমিক ভইয়েরা একদিন কাজ না করিলে বড় বাবুদের হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি টাকা লোকসান হয়, সেই শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ঝরানো অর্থ ঠকিয়ে মধ্যসত্বভোগী অলস বাবুরা কোনো-কোনো মালিকগণও বিলাশ বহুল পাঁচতারা হোটেলে, গেষ্ট হাউজে, মদ্যপ বারে, বাগান বাড়ীতে অনৈতিক কর্মকান্ড সহ আনন্দ-ফূর্তি করে টাকা-পয়সা অপচয় করে থাকেন। এহেন অপচয় রোধ করে যদি শ্রমিক ভাইদের ন্যায্য পাওনা, খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার পিছনে কিছুটা মাণবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, তাহলে হয়তোবা এই অপচয়কারী মালিকদের পায়ে শ্রমিক ভাইয়েরা সালাম দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রান ভরে দোয়া করতেন।
সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শ্রমিক দিবস ১লা মে ২০১৮ হতে মালিক শ্রমিক এক হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশকে হীরের বাংলাদেশে হিসেবে গড়ে তুলুন। শ্রমিকদের করুনা নয় ন্যায্য অধিকার দিন। ঘাম শুকানোর পূর্বে তাহাদের পাওনা পরিশোধ করুন।
Be the first to comment on "করুনা নয় ন্যায্য অধিকার চাই"