শিরোনাম

প্রতারণার ফাঁদ (পর্ব -২)

 

মো: সেলিম মিয়া:

বেশ কয়েক বছর যাবত দেশী- বিদেশী  সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র একের পর এক সহজ-সরল অর্থলোভী মানুষদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে তক্ষক নামক বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের নামে প্রতারণা পূর্বক লক্ষ-লক্ষ,কোটি-কোটি টাকা অবৈধভাবে লাভবান হইতেছে।পক্ষান্তরে অসংখ্য অর্থ লোভী মানুষ এই প্রতারণার ফাঁদে  পা দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে।প্রতারক চক্রের টার্গেট অতি লোভী প্রকৃতির মানুষ।আর এই মানুষ খোঁজার দায়িত্বে থাকে বেকার,অসহায় মানুষেরা।চক্রটি তিন ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রথম ভাগ ঢাকা সহ বিভিন্ন সিটির আভিজাত্য এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। দ্বিতীয় ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন জঙ্গল এলাকায় থাকে। তৃতীয় ভাগ মাঠ কর্মী হিসেবে বিভিন্ন শহর ও শহরতলিতে থাকিয়া  সুকৌশলে  লোভী প্রকৃতির লোক খুঁজতে থাকে। মাঠ কর্মী যখন তার পছন্দ মত লোভী লোক পেয়ে যায় তখন একটি তক্ষক প্রানীর ছবি দেখাবে এবং বলবে ভাই আপনার মতো আমার যদি টাকা থাকতো তাহলে এই তক্ষক টা আমি কিনে এনে চারগুন টাকা লাভ করতে পারতাম। আমার হাতে  পার্টি আছে। কিন্তু  তাদের দিয়ে কিনে আনলে আমার বেশি লাভ হবেনা। তাই আপনি যদি আমাকে অর্ধেক লাভ দেন তাহলে আমি আপনাকে নিয়ে গিয়ে কিনে এনে বিদেশি সাহেবের নিকট বিক্রি করার পর আমি ভাগের টাকা নেবো। বিদেশি সাহেব পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারেনা তাই সে যাবেনা। তাকে এনে দিতে হবে। অতঃপর বিভিন্ন ছলা-কলা করে 30% লাভ নিবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশি /ঢাকাইয়া বাবুর সাথে পরিচয় করাবে।  পাহাড়ে যেই তক্ষক টা প্রতারকদের কাছে  আছে  সেটা যদি হয় ষোলো ইঞ্চির  তাহলে বলবে সতেরো ইঞ্চি মেপে আনবে কম হলে আনবেনা। কারন সতেরো ইঞ্চির কম হলে ক্যানসার এর ঔষধ হবেনা। আমার কাছে নিয়ে এসো বিশ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনবো। তখন তো লোভী লোক  নগদ আট/দশ লক্ষ  টাকা যেভাবেই হোক সংগ্রহ  করে  নিয়ে পাহাড়ে যাবে। তক্ষক প্রানীর শরীরটা কুঁজো ধরনের তাই প্রতারক চক্র তাদের হেফাজতে থাকা ষোলো ইঞ্চি তক্ষক টার নীচে চটা দিয়ে বেধে টান করে আঠারো ইঞ্চি দেখিয়ে একটা থলের ভিতর রেখে উক্ত টাকার  বিনিময়ে তক্ষক টা দিয়ে দিবে। অতি আনন্দে আনন্দিত হয়ে ঢাকাইয়া/বিদেশী সাহেবের কাছে ওটা নিয়ে  যাবে। সাহেব স্বাভাবিক ভাবে বার বার মেপে দেখবে ও অভিনয় করে ভুরু কুঁচকে মুখ কালো করে বলবে এ কি?সর্বনাশ করলে এতো ষোলো ইঞ্চি তক্ষক। এটা আমার চলবেনা। আমি পাহাড়  জঙ্গল ভয় পাই বলে তোমাদের পাঠাইলাম। এদিকে আমি বিদেশে পাঠাব চুক্তি করেছি এক কোটি টাকাপাবো । সব শেষ করে দিলে। দেখো পাল্টাইয়া আনতে পারোনাকি। লোভী লোকটার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সাহেব তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলে তোমাকে যেভাবে ঠকাইছে।তুমিও এভাবে অন্যকে ঠকাইয়া বিক্রি করে তোমার ক্ষতি পুষিয়ে নাও। প্রতারক চক্র  পাহাড়ে যেই টাকাটা গ্রহণ করলো সেই টাকাটা   তিন স্তরের প্রতারক চক্র ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে বিনা চালানে অবৈধভাবে লাভবান হইয়া তাহাদের অস্থায়ী বাসা পরিবর্তন করে নতুন নতুন লোভী প্রকৃতির লোকের সন্ধান করতে থাকেন। লোভী লোকটা ওটাকে বিক্রি করতে পারলে ভালো না পারলে জিদ করে মেরে ফেলে। বন্ধুরা তক্ষক নামক বন্যপ্রাণী একেবারেই সাধারণ। এর পৃথক কোনও বিশেষত্ব নেই।এটা দিয়ে ক্যানসার বা দূর্লভ কোনও ঔষধ তৈরী হয়না। সাবধান থাকবেন আপনাদের যেনো কেউ প্রতারণার ফাঁদে আটকাতে নাপারে।আপনারা জেনে অবাক হবেন যে আমাদের  সাংবাদিক ও সরকারি বেসরকারি চাকূরীজিবী এবং ব্যাবসায়ী মহলের অনেক সচেতন বন্ধু লোভের বশবর্তী হয়ে এই প্রতারক চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অচেতন হয়ে পড়ে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমার কাছে মদন সেজে দুঃখ প্রকাশ করে।( চলবে। পরবর্তী পর্ব কষ্টিপাথর বিষ্ণু মূর্তি)।

Be the first to comment on "প্রতারণার ফাঁদ (পর্ব -২)"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*